নীল সমুদ্রের বিশাল জলরাশির মাঝখানের উকি মেরে দাড়ানো জায়গাটিই বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন (st martin)। সেন্টমার্টিন দ্বীপটি বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত। টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে যাহার অবস্থান এবং কক্সবাজার জেলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দুরত্বে। ছোট্ট দৃষ্টিনন্দন দ্বীপটির আয়তন ১৩ বর্গ কিলোমিটার। এটি আজ বাংলাদেশের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থানে পরিনত হয়েছে ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে। কিন্তু এখানে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে জাহাজ।
St Martin দ্বীপের ইতিহাস
সৌন্দর্য্য মন্ডিত সেন্ট মার্টিন (st martin) দ্বীপটিকে কবে প্রথম শনাক্ত করা হয়েছে, সেই ইতিহাস আজও অজানা। আরব বণিকরা প্রথমে দ্বীপটির নামকরণ করেন জিজ্ঞিরা এবং তারা বন্দর নগরী চট্রগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যাওয়ার সময় এখানে বিশ্রাম নিতেন। ১৮৯০ সালের দিকে ১৩ টি বাঙ্গালী ও রাখাইন মৎস্যজীবি পরিবার জীবিকার জোগান জোগাতে এই দ্বীপের উত্তারাংশে বসতী গড়ে তোলে। ব্রিটিশরা তাখের দখলের সময় এই দ্বীপের নামকরণ করেন চট্টগ্রামের তত্কালীন জেলা প্রশাসক মিঃ মার্টিনের নামনুসারে সেন্ট মার্টিন (saint martin) দ্বীপ। স্থানীয় মানুষজন এই দ্বীপের নাম দিয়েছেন “নারিকেল জিনজিরা” যার অর্থ ‘নারকেল দ্বীপ’, এবং “দারুচিনি দ্বীপ”।
প্রশাসননিক কাঠামো
সেন্টমার্টিন টেকনাফ উপজেলার অধীনে একটি ইউনিয়ন পরিষদ, যাহা ৯ টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এবং এর অঞ্চলগুলো পাড়ায় বিভক্ত পশ্চিম পাড়া, ডিল পাড়া, উত্তর পাড়া, মাঝের পাড়া, দক্ষিণ পাড়া, পূর্ব পাড়া, কোনার পাড়া, নজরুল পাড়া, গোলাচিপা।
St Martin দ্বীপের বাসিন্দা
দ্বীপটির লোকসংখ্যা প্রায় ৬,৭২৯ জন এবং বেশিরভাগ মানুষই মৎস্যজীবি। পাশাপাশি ধানের চাষ হয় ও প্রচুর পরিমানে নারিকেল পাওয়া যায়। অক্টোবর থেকে এপ্রিলের মধ্যে, পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে জেলেরা তাদের ধরা মাছগুলি দ্বীপের অস্থায়ী পাইকারি বাজারে নিয়ে আসে। বর্ষাকালে, বঙ্গোপসাগরে বিপজ্জনক অবস্থার কারণে, বাসিন্দাদের মূল ভূখণ্ডে (টেকনাফ) যাওয়ার সুযোগ নেই। এখানে একটি হাসপাতাল রয়েছে ।
কিভাবে যাবেন সেন্ট মার্টিন (Saint Martin)
সেন্ট মার্টিন যেতে হলে প্রথমে অবশ্যই টেকনাফ অথবা কক্সবাজার আসতে হবে।
ঢাকা থেকে টেকনাফ
ঢাকা টু টেকনাফ বাস ভাড়া ৯০০ টাকা (নন-এসি); ১৫০০-২০০০ টাকা (এসি)। ঢাকা থেকে টেকনাফগামী বাসগুলো ৭.০০ টা বা ৭.৩০ টার মধ্যে ছেড়ে যায় এবং আল্লাহর রহমতে পরদিন সকাল 8.00 টার মধ্যে টেকনাফের শীপ ঘাটে নামিয়ে দেয়।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ
ঢাকার বিভিন্ন বাস কাউন্টার থেকে প্রতিদিন অনেক এসি/ননএসি বাস ছেড়ে যায় কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। কক্সবাজার নেমে খুব ভোরে রওয়ানা দিতে হবে টেকনাফ শীপের ঘাটের উদেশ্যে, নয়ত জাহাজ ধরতে না পারার সম্ভবনা বেড়ে যায়। যেতে বাস ভাড়া লাগবে ১৫০ টাকা।
টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন
টেকনাফ থেকে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হলো জাহাজ। যাওয়া-আসা ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১২০০ টাকা পযর্ন্ত। জাহাজ ও আসনের শ্রেনীর জন্য ভাড়ার কমবেশী হয়। যাওয়ার তারিখ এবং ফিরে আসার তারিখ টিকেট ক্রয়ের সময় ঠিক করে নিতে হবে।
শীপগুলো সাধারণত ৯.৩০ মিনিটে ঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং ১২.০০ ঘটিকার মধ্যে পৌছে যায়। শীপগুলো আবার বিকেল ৩.০০ ঘটিকার দিকে সেন্ট মার্টিন থেকে টেকনাফের উদেশ্যে ছেড়ে আসে।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়ে সেন্ট মার্টিন
সাপ্তাহিক/সরকারি ছুটির দিন গুলোতে ভ্রমণ করলে; বাস এবং জাহাজের টিকেট আগে থেকেই কেটে রাখতে হবে। অন্যন্য দিনগুলিতে জাহাজ ঘাটেই জাহাজের টিকেট পাওয়া যাবে।
থাকার হোটেল/রিসোর্ট
সেন্ট মার্টিনে থাকার জন্য মোটামুটি মানের হোটেল অথবা রিসোর্ট পাবেন। রুম ভাড়া ১২০০-২০০০ টাকা। একটি রুমে সবোর্চ্চ ৪ জন থাকা যায়। সাপ্তাহিক/সরকারি ছুটির দিন গুলোতে ভাড়া বেড়ে যায়। এবং অবশ্যই আগে থেকে হোটেল বুকি দিয়ে যাবেন।
খাওয়া-দাওয়া
জনপ্রতি সকালের নাস্তায় ৫০-৮০ টাকা, দুপুরের এবং রাতের খাবার ১২০-১৮০ টাকা। রাতে বার-বি-কিউ ১৭০-২০০ টাকা পরবে।
সর্তকতা অবলম্বন করুন
- আপনার ভ্রমেণের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে প্রবাল নিয়ে আসবেন না!
- যেখানে সেখানে পানির বোতল, খালি প্যাকেট ইত্যাদি অপচনশীল জিনিস ফেলবেন না!
- অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করবেন না, পর্যটকদের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করতে হয়, যাহা সেন্টমার্টিন দ্বীপের জন্য একটি ঝুকির কারণ!
- জাহাজে যাওয়ার সময় কিছু সাগরে ফেলবেন না।
- দ্বীপের বা প্রকৃতির ক্ষতি হয় এবং সৌন্দর্যের হানি হয় এমন যে কোন কাজ থেকে বিরত থাকুন।
Leave a Reply