সুন্দরবন হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চাল। এটি বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম। বনভূমিটি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত। প্রায় ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা এই বনাঞ্চলের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশে এবং বাকি 3,983 বর্গ কিলোমিটার রয়েছে ভারতের মধ্যে।
সুন্দরবন ৬ ই ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো (UNESCO) বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর তালিকায় স্বীকৃতি পায়। সুন্দরবন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য বিখ্যাত, এছাড়াও নানান ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। জরিপ অনুযায়ী এখানে ১০৬ টি বাঘ ও ১০০০০০ থেকে ১৫০০০০ টি চিত্রা হরিণ, ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাণী রয়েছে।
প্রতিনিয়ত লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থী ঘুরতে আসছে সুন্দরবনের সোন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে। সুন্দরবন নামের আক্ষরিক অর্থ সুন্দর জংঙ্গল বা বনভূমি। সুন্দরবনে প্রচুর পরিমানে সুন্দরী গাছ জম্মায়, যা থেকেই হয়ত নামকরণ করা হয়েছে সুন্দরবন। বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য উপভোগ করতে বছরজুড়েই পর্যটকদের আসা-যাওয়া থাকে। তবে শীত মৌসুমে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় গড়ে ওঠা এলাকায় পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে। শীতকাল হচ্ছে সুন্দরবন ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। দর্শনার্থীদের জন্য পুরো বন ঘুরে দেখা সম্ভব না হলেও, বনের বিশেষ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যাহা ভ্রমণ পিপাসা মিটানোর জন্য যথেষ্ঠ।
আজ দেখেছ নীলকমল কাল পাবে দুবলার চর;
খানিক বাদে কোকিলমনি কিংবা নলিয়ান,
যেথায় পরম শ্রান্তি দিবে গোলপাতার ঘর।
উৎসুক পর্যটকের ভিড়ে পেতেও পার করমজলে
দু’চোঁখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে ভাসি অথৈ সাগর জলে।
মাঝরাতে কর্ণ কুহরে বাজে জলদস্যুর কোকিল শিস
মজা করে খেলায় মাতে মাথার উপর ফ্লায়িং ফিশ।
চোঁখের পরে চোঁখ তুলে চায় অবুঝ মনের হরিণ পাল
কুমির দেখ আসছে নিয়ে গরীব জেলের সুতোর জাল।
বাঘ মামার সাথে হয়না দেখা এটাই বড় ভাগ্য
বন্য বাঘের আহার হতে আরও হওয়া চাই যোগ্য!
সুন্দরবনে সুন্দরী নেই,আছে গোলপাতা আর ঝাউবন
তবু বিচিত্র সব পাখপাখালি ভরিয়ে দিবে শূন্য মন।
এত বেশী ঘুরাঘুরি আছে নিশ্চিত তার কারণ
সব কারণের খবর বলতে আছে কঠোর বারণ।
* কবি এস এম শাহনূর
কিভাবে যাবেন সুন্দরবন
রাজধানী শহর ঢাকা থেকে সরাসরি সুন্দরবনে যাওয়া যায় না। সুতরাং আপনাকে ঢাকা থেকে বাসে অথবা লঞ্চে করে বাগেরহাট যেতে হবে। ঢাকা থেকে এসি এবং ননএসি দুই ধরনের বাস চলাচল করে সরাসরি বাগেরহাট পযন্তর্ । সেক্ষেত্রে নন-এসি বাসের ভাড়া পড়বে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। বাগেরহাটে পৌঁছাতে সময় লাগে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। বাগেরহাট থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়ক পথে পাড়ি দিয়ে যেতে হবে মোংলা। মোংলা থেকে নৌযানে করে কিছুদূর যাওয়ার পরেই সুন্দরবনের দেখা মিলবে।
Leave a Reply