জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেলেও, সেই আমলে জমিদারদের দ্বারা নির্মিত প্রাসাদ, মসজিদ, মন্দির ও অন্যান্য স্থাপনা অনেক ধকল পেরিয়ে এখনো ঠিকই রয়েছে। ঠিক তেমনই এক নয়নাভিরাম জমিদার বাড়ী হচ্ছে পঠিয়া রাজবাড়ী বা পাঁচআনি জমিদারবাড়ী নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যে গুলোর মধ্যে রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ী হচ্ছে অন্যতম।
একসময় পুঠিয়া রাজবাড়ী ছিল মহারানী হেমন্তকুমারী দেবীর বাসভবন। ১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবী আকর্ষনীয় ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে আয়তাকার এই দ্বিতল বর্তমান রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন। পুঠিয়া রাজবংশ মুঘল সম্রাট আকবরের সময় (১৫৫৬-১৬০৫) খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় পুঠিয়া ছিল লস্করপুর পরগনার অর্ন্তগত। হেমন্তকুমারী দেবী ছিলেন কুমার যতীন্দ্রনারায়ণের স্ত্রী। হেমন্তকুমারী দেবী মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার ৬ মাসের সন্তান গর্ভে নিয়ে বিধবা হন। তিনি পুঠিয়ার এই রাজবাড়ীটি নির্মাণকরে শাশুড়ী মহারানী শরৎসুন্দরী দেবীর নামে উৎসর্গ করেন। হেমন্তকুমারী দেবী বহুসংখ্যক সৎকাজের জন্য লর্ড কার্জন কর্তৃক ১৯০১ সালে “রানী” উপাধী লাভ করেন এবং ১৯২০ সালে লর্ড আরউইনের তাবে “মহারানী” উপাধিতে ভূষিত করেন।
ভবনের সম্মুখ ভাগের স্তম্ভ, অলংকরন, কাঠের কাজ, কক্ষের দেয়ালে ও দরজার উপর ফুল ও লতাপাতার চিত্রকর্ম চমৎকার নির্মাণ শৈলীর পরিচয় বহন করে। রাজবাড়ীর ছাদ সমতল, ছাদে লোহার বীম, কাঠের বর্গা এবং টালি ব্যবহৃত হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য রাজবাড়ির চারপাশে পরিখা খনন করা হয়েছিল। পুঠিয়া রাজবাড়ীর আশে পাশে ছয়টি রাজদিঘী আছে। প্রত্যেকটা দিঘীর আয়তন ছয় একর করে। মন্দিরও আছে ছয়টি। সবচেয়ে বড় শিব মন্দির। এ ছাড়া আছে রাধাগোবিন্দ মন্দির, গোপাল মন্দির, গোবিন্দ মন্দির, দোলমঞ্চ ইত্যাদি। প্রতিটি মন্দিরের দেয়ালেই অপূর্ব সব পোড়ামাটির ফলকের কারুকাজ। জোড়বাংলা মন্দির, বাংলো মন্দির, পঞ্চরত্ন অর্থাৎ চূড়াবিশিষ্ট মন্দির অর্থাৎ বাংলার বিভিন্ন গড়নরীতির মন্দিরগুলোর প্রতিটিই আকর্ষণীয়। এ ছাড়া রানির স্নানের ঘাট, অন্দর মহল মিলিয়ে বিশাল রাজবাড়ী প্রাঙ্গণ।
ঢাকা থেকে রাজশাহী কিভাবে যাবেন
বাসযোগে
বাসযোগে ঢাকা থেকে রাজশাহী শহরের দুরত্ব ২৪৭.৭০ কিমি এবং যেতে সময় লাগবে প্রায় ৬ ঘন্টা। রাজশাহী যেহেতু বিভাগীয় শহর। তাই প্রতিদিন ঢাকার বিভিন্ন বাস টার্মিনাল থেকে অসংখ্য এসি/ননএসি বাস ছেড়ে যায় রাজশাহীর উদ্যেশে।
বাসের নাম | ভাড়া ( নন এসি) | ভাড়া (এসি | ফোন নম্বর | টিকেট/তথ্য |
দেশ ট্রাভেলস | ৪৮০ | ১০০০ | ০১৭৬২৬৮৪৪৪০ | যোগাযোগ |
শ্যামলী পরিবহন | ৪৮০ | – | ০২-৯০০৩৩৩১ | যোগাযোগ |
তুহিন লাইন | ৪৮০ | – | – | যোগাযোগ |
গ্রামীণ ট্রাভেলস | ৪৮০ | ১০০০ | ০১৭০১৬৯৬৯৪০/৪১ | যোগাযোগ |
ন্যাশনাল ট্রাভেলস | ৪৮০ | ১০০০ | ০১৭১৩২২৮২৮৭ | যোগাযোগ |
একতা ট্রান্সপোর্ট | ৪৮০ | – | – | যোগাযোগ |
ট্রেনযোগে
রাজধানী ঢাকা থেকে রাজশাহীর রেলপথে দূরত্ব প্রায় ২৪৫ কিলোমিটার এবং যেতে সময় লাগে প্রায় ৬ থেকে ৮ ঘন্টা। এই রুটের জন্য আন্তঃনগর ট্রেন পরিসেবা ভালো । ট্রেনের ভাড়া আসন বিভাগ ভেদে ৩৪০ টাকা থেকে ১০২০ টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট অথবা এ্যাপ থেকে টিকেট ক্রয় করা যায়। নির্ধারিত যাত্রা তারিখের কিছুদিন পুর্বে টিকেট ক্রয় করে রাখা ভালো।
ট্রেন নং | ট্রেনের নাম | চলাচল বন্ধ থাকে | ছাড়ার স্থান | ছাড়ার সময় | গন্তব্য | পৌছায় |
৭৫৩ | সিল্বসিটি এক্সপ্রেস | রবিবার | ঢাকা | দুপুর ০২.৪৫ | রাজশাহী | রাত ০৮.৩৫ |
৭৫৯ | পদ্মা এক্সপ্রেস | মঙ্গলবার | ঢাকা | রাত ১১.০০ | রাজশাহী | ভোর ৪.৩০ |
৭৬৯ | ধূমকেতু এক্সপ্রেস | বৃহস্পতিবার | ঢাকা | সকাল ৬.০০ | রাজশাহী | সকাল ১১.৪০ |
রাজশাহী থেকে কিভাবে পুঠিয়া রাজবাড়ী যাবেন
রাজশাহী জেলা সদর থেকে ৩৪ কিঃমিঃ উত্তর- পূর্বে নাটোর মহাসড়ক অভিমুখে পুঠিয়া অবস্থিত। রাজশাহী থেকে নাটোর গামী বাসে চড়ে বা লোকাল বাসে করে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ডে মেনে ৫ থেকে ১০ মিনিট হাটলেই পুঠিয়া রাজবাড়ি। এছাড়াও সরাসরি পুঠিয়া যাবার লোকাল বাসে করেও পুঠিয়া যাওয়া যায়।
Leave a Reply