মুঘলরা বাংলা জয় করার মাধ্যমে জমিদার একটি পদবি হয়ে ওঠে এবং জমিদার বলতে বোঝায় জমি ও অধিকারের মালিক। জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে ১৯৫০ সালে বাংলাদেশ থেকে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়। সুতরাং সংবিধান অনুযায়ী রাষ্টকে দেশের সব জমির মালিক ঘোষনা করা হয়। কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া প্রাসাদ আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে । এগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় জমিদারদের সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের কথা। ঠিক এমনই এক কালের সাক্ষী রূপসা জমিদার বাড়ি ।
চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা গ্রামে এই রূপসা জমিদার বাড়ি অবস্থিত। যখন এই অঞ্চলের অধিকাংশ জনপদ উন্নত সভ্যতার ছোয়া পায়নি, তখনও ফরিদগঞ্জের রূপসা গ্রামটি ছিল একটি সমৃদ্ধ জনপথ।
ঊনিষ শতকের প্রথম দিকে মোহাম্মদ গাজী নামে একজন এই জমিদার পরিবারের সুচনা করেন। মোহাম্মদ গাজী দিলেন অন্যান্য জমিদারদের থেকে আলাদা প্রকৃতির। সমাজের জনমানুষের কাছে ছিলেন সব সময়। জনকল্যাণকর কাজের জন্য তিনি কৃষকদের জমি ওয়াক্ফ করে দিয়েছেন। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্যও তিনি অনেক অবদান রেখেছেন । তাহার মধ্যে রূপসা আহম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, রূপসা আহম্মদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা ও রূপসা স্কুল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন ধর্মভীরু মানুষ। ইসলামেরর জন্য নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন এবং রূপসার প্রাচীন মসজিদটি তার অনুদানেই নির্মাণ করা।
জমিদারদের খাজনা আদায় করার জন্য নানান পাশবিক অত্যাচার কিন্তু তার জমিদারিতে তার বিন্দু মাত্র প্রভাব ছিল না। তার এই গুন্নানিত আচরনের জন্য আরও স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন জন মানুষের মনে।
কিভাবে যাবেন রূপসা জমিদার বাড়ি ও কি দেখবেন
চাঁদপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত ফরিদগঞ্জ। উপজেলা সদরের ঠিক পাশেই রূপসা বাজারের পশ্চিম-দক্ষিণ কোনে তাকালেই চোখে পড়বে রূপসা জমিদার বাড়ি। পাশেই কারুকার্জ খচিত একটি মসজিদ। মসজিদের দক্ষিণ পাশে একটি কবরস্থান। এর প্রতিটি ফলকে লেখা রয়েছে চিরনিদ্রাায় শায়িত ব্যক্তিদের সুকর্মের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। পথ ধরে সামনে এগুলেই চোখে পড়বে ঘাঁট বাঁধানো দীঘি। বাড়িটির সামনে তাকালে নজরে পড়বে জমিদারবাড়ির ঐতিহ্য সেই কাছারি ঘর। প্রায় দু’শতাব্দির আগের কথা। আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে রূপসার জমিদারদের গোড়াপত্তন।
চাঁদপুর জেলার মেঘনা নদীর উত্তর পাড়ের ঐতিহ্যবাহী রূপসা জমিদার বাড়ির কথা। জমিদারের জমিদারি না থাকলেও এতটুকু সম্মান আর শ্রদ্ধার কোনো ঘাটতি হয়নি প্রজা প্রিয় জমিদারদের প্রতি সাধারণ মানুষের।
তাইতো এ এলাকার সাধারণ মানুষ আজো জমিদারদের পূণ্যময় কাজগুলোর প্রশংসা করতে ভুলেন না। জমিদারি প্রথা থাকাকালীন প্রজাদের খাজনার টাকায় ভোগ বিলাস না করে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অনেক কিছুই স্থাপন করে গেছেন জমিদাররা।
Leave a Reply