আহসান মঞ্জিল ছিল ঢাকার নবাবের সরকারী আবাসিক প্রাসাদ। ঢাকা জেলার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ইসলামপুরের কুমারটোলিতে আহসান মঞ্জিল অবস্থিত। ভবনটির প্রকৃত নির্মাতা হলেন মোঘল আমলে ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল অঞ্চলের জমিদার শেখ এনায়েত উল্লাহ। তিনি মৃত্যু করার পর, তার পুত্র মতিউল্লাহ ভবনটি ফরাসী বণিকদের কাছে বিক্রি করেন।

১৮৩৫ সালে নবাব আব্দুল গনির পিতা খাজা আলিমুল্লাহ ফরাসিদের নিকট থেকে এই ভবণটি ক্রয় করেন এবং সংস্কারের মাধ্যমে বসবাসের জন্য উপযোগী করে তোলেন। পববর্তীতে নবাব আব্দুল গণি ১৮৬৯ সালে প্রাসাদটির পুন:নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং ১৮৭২ সালে সমাপ্ত হয়। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর, তার পুত্র খাজা আহসানুল্লার নামনুসারে এর নামকরণ করেন আহসান মঞ্জিল । বর্তমানে এটি যাদুঘর হিসাবে মনোনীত।

শেখ এনায়েত উল্লাহ ছিলেন একজন অত্যন্ত মনোহর প্রকৃতির মানুষ। তিনি এই বাড়িটিকে তার বাগান বাড়িতে অন্তর্ভুক্ত করেন। সুন্দর এই প্রাসাদ টি নিমার্নের পর নাম দিয়েছেন রঙ্গমহোল । তিনি এখানে বিদেশ থেকে মেয়েদের সংগৃহীত সুন্দর পোশাক পরে এবং ব্যয়বহুল অলঙ্কার পরিধান করে উপভোগ করতেন।

ঢাকার ফৌজদার (মোগল সম্রাটের প্রতিনিধি) এক সুন্দরী মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলের। পরে এক রাতে শেখ এনায়েত উল্লাহকে একটি পার্টিতে নিমন্ত্রণ করেন এবং ফিরে আসার সময় ষড়যন্ত্র করে তাকে হত্যা করে। মৃত্যুর সংবাদ শুনে সেই মেয়েটিও আত্মহত্যা করেছিল। বিশ শতকের শুরুর দিকে প্রাসাদ উঠানের উত্তর-পূর্ব কোণে শেখ এনায়েত উল্লাহর একটি কবর ছিল।

আহসান মঞ্জিলেই ঢাকা শহরের প্রথম বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে ওঠে। প্রতিদিন অসংখ্য ভ্রমণ পিসাসু মানুষ ছুটে আসেন এখানে।

আহসান মঞ্জিল পরিদর্শনের সময়সূচি:

  • এপ্রিল-সেপ্টেম্বর – (শনিবার-বুধবার) সকাল ১০.৩০ টা – বিকাল ৫.৩০ টা এবং শুক্রবার- বিকেল ৩.০০ টা – সন্ধ্যা ৭.৩০ টা।
  • অক্টোবর –মার্চ – (শনিবার-বুধবার) সকাল ৯.৩০ টা – বিকাল ৪.৩০ টা এবং শুক্রবার – দুপুর ২.৩০ টা – সন্ধ্যা ৭.৩০ টা।
  • বৃহস্পতিবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন জাদুঘর বন্ধ থাকে।

টিকেট কাউন্টার ও মূল্য

আহসান মঞ্জিলের পূর্ব দিকের ফটকটির, ডান পাশে রয়েছে টিকেট কাউন্টার। নবাব আমলে এগুলো সৈনিকদের ব্যারাক ও গার্ডরুম হিসেবে ব্যবহার করা হত। জনপ্রতি প্রবেশ ফি ৫ টাকা এবং ১২ বছরের নিচে জনপ্রতি ২ টাকা। সার্কভুক্ত দেশের জন্য প্রবেশ ফি জনপ্রতি ৫ টাকা এবং অন্যান্য দেশের জন্য জনপ্রতি ৭৫ টাকা। প্রতিবন্ধিদের জন্য প্রবেশ ফ্রি এবং পূর্ব থেকে আবেদনের ভিত্তিতে ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে জাদুঘরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়।

কি কি দেখবেন

নবাবি আমলের উনিশ শতকের ব্যবহৃত বর্ম, আলোকচিত্র, নানান পেইর্ন্টি, আলমারি, তৈজসপত্র, ডাইনিং রুম, মুসলিম লীগ কক্ষ, বিলিয়ার্ড কক্ষ, সিন্দুক কক্ষ, হিন্দুস্তানি কক্ষ, লাইব্রেরি কক্ষ, কার্ডরুম, স্টেট বেডরুম এবং আরও অনেক কিছু।

আহসান মঞ্জিল কিভাবে যাবেন

এটি ঢাকার সদরঘাটের খুবই নিকটবর্তী, যে পায়ে হেটেও যাওয়া যায়। তাই ঢাকার গুলিস্তান থেকে সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে। এছাড়াও বাবুরবাজার থেকেও এখানে যাওয়া যায়। যারা লঞ্চযোগে যাতায়ত করেন, লঞ্চ থেকে নেমে হাতের বাম পাশ ধরে সামনে এগোলেই দেখা পেয়ে যাবেন। আপনি ব্যক্তিগত গাড়ি বা অটো সিএনজি রিকশায়ও যেতে পারেন।