যমুনা বহুমুখী সেতু বা যমুনা সেতু বাংলাদেশের যমুনা নদীর উপরে অবস্থিত একটি সড়ক ও রেল সেতু। যমুনা সেতু কত কিলোমিটার বা বঙ্গবন্ধু সেতুর দৈর্ঘ্য কত? ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট। সেতুটি বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু। 1994 সালের 15 ই অক্টোবর এর নির্মাণ কার শুরু করা হয়, যা ১৯৯৮ সালে 23 শে জুন চলাচলের জন্য উনুক্ত করে দেয়া হয়। যমুনা সেতু নদীর পূর্ব তীরের ভূঞাপুর এবং পশ্চিম তীরের সিরাজগঞ্জকে সংযুক্ত করে। এটি বিশ্বে ১১তম এবং দক্ষিণ এশিয়ার ৬ষ্ঠ দীর্ঘতম সেতু।
যমুনা বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদীর মধ্যে বৃহত্তর এবং প্রবাহিত পানি আয়তানিক পরিমাপের দিক থেকে বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম। সেতুটি বাংলাদেশের পূর্ব এবং পশ্চিম অংশের মধ্যে একটি কৌশলগত সংযোগ প্রতিষ্ঠিত করে। এটি অত্র অঞ্চলের জনগণের জন্য বহুবিধ সুবিধা বয়ে আনে, বিশেষত অভ্যন্তরীন পণ্য এবং যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা দ্রুত করে। পরবর্তিতে এই সেতুর নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধু সেতু।
বঙ্গবন্ধু সেতু স্থাপনের জন্য প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৪৯ সালে। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রথম এ উদ্যোগ নেন। কিন্তু তখন তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৪ সালের ১৫ অক্টোবর এর কাজ শুরু হয় এবং ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
হুন্দাই $৬৯৬ মিলিয়ন ইউ এস ডলারের বিনিময়ে ১৯৯৪ সালে যমুনা বহুমুখী সেতু নির্মানের কাজ হাতে নেয়; এতে মোট ব্যয়ভারের $২০০ মিলিয়ন ১% নামেমাত্র সুদে IDA, ADB, OECD বহন করে এবং বাকী $৯৬ মিলিয়ন বাংলাদেশ সরকার বহন করে।
২০০৩ সালে সেতু কর্তৃপক্ষ যমুনা বহুমুখী সেতুটি বুঝে নেয়। চুক্তি মোতাবেক ত্রুটির জন্য পরবর্তী ১০ বছর যমুনা সেতুর ত্রুটির সব ব্যয়ভার হুন্দাইকে বহন করতে হবে বলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার ২১ আগস্ট ২০০৭ তারিখের পত্রে উল্লেখ করা হয়।
যমুনা বহুমুখী সেতু
পরবর্তীতে সেতু সংস্কার কাজে চীনের চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) এবং ২০০৮ সালের মার্চে ফিলিপাইনের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাঞ্জেল লাজারো অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডকে ফাটল মেরামত কাজের টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরি ও মেরামত কাজ তদারকির পরামর্শক হিসাবে নিয়োগ করা হয়।
সেতুর মূল পরিকল্পনায় শুধু একমুখী (সিঙ্গেল ট্র্যাকশন, নন ইলেকট্রিক) মিটারগেজ ট্রেন চলার পরিকল্পনা ছিল। তবে পরে ব্রডগেজ লাইন চালুর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সে সময় ব্রডগেজ ও মিটারগেজ সিস্টেমের চারটি ট্রেন দৈনিক মাত্র ৮ বার চলাচল করার কথা ছিল।
সেতুর ওপর স্থাপিত ট্রেন লাইনটির ব্রিজের পিলার স্থাপনা থেকে কিছুটা উত্তর দিকে। ২০০৮ সালে সেতুতে ফাটল দেখা দেয়। সেতু বিভাগ এবং দেশের বিশেষজ্ঞগণ ফাটলটিকে হেয়ার ক্র্যাক হিসাবে ধরেছিলেন। ফাটলের জন্য প্রথমে ট্রেন চলাচলকে দায়ী করা হলেও পরে তা মূল নির্মাণ ত্রুটির কারণে (পরিকল্পনা বাস্তবায়ন) সেতুতে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এর কিছু দিন পরেই সেতুর ফাটল উত্তর লেন থেকে দক্ষিণ লেনেও ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিজের মূল ভিত্তি থেকে সামান্য বাইরে ট্রেনলাইনের অবস্থান হওয়ায় এ ফাটল দেখা দিতে পারে বলে ধারনা করা হলেও পরিকল্পনাকারীগণ তা অস্বীকার করেছেন।
২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে দেখা যায় ২০০৮ সালে ফাটলের যে অবস্থা ছিল পরের দুই বছর পর তা অন্তত ৫০ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে যমুনা সেতুতে খুব ধীরগতিতে ট্রেন চালানো ও এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রক দিয়ে যানের ভার ও গতি সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।
Leave a Reply